Skip to main content

Proportion in Arabic Calligraphy ক্যালিগ্রাফির খত আল-মানসুব

ক্যালিগ্রাফির খত আল-মানসুব


ইবনে মুকলা(মৃ.৯৪০ই.) স্বীয় পিতা ও সমসাময়িক বিখ্যাত উস্তাদগণের কাছে ক্যালিগ্রাফি শিখে যখন কর্মজীবনে প্রবেশ করলেন; মন্ত্রীত্বের মত প্রশাসনিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেও ক্যালিগ্রাফিকে তিনি যুগান্তকরী পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।  তিনি সত্যিকার অর্থে ক্যালিগ্রাফির ভিত্তিকে এতটাই মজবুত করে গিয়েছেন যে, তাঁর পরবর্তীদের জন্য ক্যালিগ্রাফির ইমারত গড়তে নতুন কোনো ভিত্তির প্রয়োজন পড়ে নাই।

তাহলে ক্যালিগ্রাফির সেই অবিস্মরণীয় ভিত্তি কি ছিল! সেটার নাম- খত আল মানসুব।
আমরা সারা বিশ্বে সুলুস শৈলীর অসাধারণ সব শিল্পকর্ম দেখি এবং ক্যালিগ্রাফির সিংহভাগই হচ্ছে সুলুস শৈলীর কাজ।


আর সুলুস শৈলীর জন্য সব কৃতিত্বই দেয়া হয় ইবনে মুকলাকে। কেন!!! কারন খত আল-মানসুব।
আমরা ক্যালিগ্রাফির ইতিহাসের কিতাবগুলোতে দেখতে পাই সুলুস শৈলী উদ্ভাবন হয়েছে ইবনে সায়িগের হাতে। অথচ তিনি ইতিহাসে প্রায় বিস্মৃত।
মজার বিষয় হলো, সুলুস শৈলীটি ইবনে মুকলার হাতে আসার আগে এর একটা লম্বা সফরনামা আছে। সেটার বয়ান অন্য একদিন হবে ইনশাআল্লাহ।  তবে সংক্ষেপে এটার কথা বলা যায়, আমরা যে দৈনন্দিন লেখার কাজে বলপয়েন্ট কলম ব্যবহার করি, এতে রেখার মোটা-চিকন হয় না। একে আরবিতে "খত তাহরীর" বা টানা হাতের তাহরিরি লেখা বলে। ইবনে সায়িগের বহু আগে কুতবাহ আল মুহাররির লেখার কাজে সিরিয়ার উন্নত কাগজ "ওয়ারাক শাম" ব্যবহার করতে গিয়ে খত আল মাওজুন উদ্ভাবন করেন এবং তাতে ক্যালিগ্রাফি করতে কলম তুমার ব্যবহার করেন। খত মাওজুন আসলে কাগজের পরিমাপ(মাকাস) অনুযায়ী হয়। এখন কুতবা দেখলেন খত মাওজুনের আলিফটি লিখতে প্রস্থে সেটা খত তাহরীরের ২৪টি আলিফের প্রস্থ বরাবর হয়। কুতবা নিজে খত তাহরীর নিয়ে একটি মান সম্মত নীতিমালা রচনা করেন, ফলে তার নামের সাথে আল-মুহাররির জুড়ে যায়।
ইবনে সায়ীগের সময় এসে তুমার শৈলির যে ওয়ারাক শাম ব্যবহার হত। তিনি তা অর্ধেক, তিন ভাগ, চারভাগ...আটভাগ করে লেখার কাজ চালাতেন প্রয়োজন অনুসারে এবং কলমের নিবও সেই অনুপাতে ছোট  হয়। একে আরবিতে নিসফ, সুলুস...সুমুন বলে। তবে তিনি দেখলেন সুলুস মাকাসের(দৈর্ঘ+প্রস্হ) কাগজে ক্যালিগ্রাফি সবচেয়ে সুন্দর হয়, ফলে এটা দিয়ে সবচেয়ে বেশী ক্যালিগ্রাফি করেন। এজন্য তিনি সুলুসের উদ্ভাবক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন।
তাহলে সমস্যাটা কি ছিল সায়িগের সুলুস শৈলীতে!!
ইবনে মুকলা সুলুসে কাজ করতে গিয়ে দেখলেন, কাগজের মাপের সাথে কলমের আনুপাতিক মাপ ঠিক থাকলেও আলিফের সাথে অন্য হরফের আনুপাতিক কোন মিল-তাল নেই। এতে লেখার ভেতর গরমিল লাগছে এবং সেটা একটা বিশৃংখল পরিবেশ তৈরি করছে। ইবনে মুকলার কাছে এটা খুবই পীড়াদায়ক মনে হল। তিনি একে একটি নিয়মসিদ্ধ শৈলি বানাতে অনেক গবেষণা সাধনার পর রচনা করলেন "খত আল-মানসুব" অর্থাত আনুপাতিক লেখনীর নীতিমালা। এতে তিনি আরো দেখালেন, এ নিয়মে যে কোনো মাপের কাগজে যে কোনো মাপের কলমে ক্যালিগ্রাফি সহজে করা যায়। এখানে এক হরফের সাথে অন্য হরফের সাথে সাইজ ও শেইপে আনুপাতিক সম্পর্ক তৈরি করে। এই নীতিমালা তিনি তিনটি পদ্ধতিতে করেন। সেটা হলো- এক. নিজাম আল-নুকাত, দুই. নিজাম আল-দায়েরাহ ও তিন. নিজাম আল-তাশাবুহ। এখানে এই পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলাপের সুযোগ নেই, অন্য কোন এক সময় ইনশাআল্লাহ বলার চেষ্টা করবো।
তার এই খত আল-মানসুব দিয়ে প্রধান ছয়টি কারসিভ(মুকাওয়ার-মুদাওয়ার) শৈলী  যথা- নাসখ, সুলুস, মুহক্কাক, রায়হানী, তাওকী ও রিকা লেখা সহজ হয়ে যায়। এ ছয়টি শৈলিকে একত্রে বলে "আল-আকলাম আল-সিত্তাহ"।  তুর্কী ক্যালিগ্রাফারগণ একে সিস্ত কলম বলেন।
খত আল-মানসুবে ক্যালিগ্রাফির হরফ, লফজ ও কালিমা(বাক্য) লিখতে যে বিষয়গুলো স্পষ্ট করা হয়েছে, তা হলো- এঙ্গেল(দারাজাহ), মোশন ও মুভমেন্ট (একতারাহ ও হারাকাহ) এবং পরিমাপ(মিজান)।
সুতরাং আপনি ভাল ক্যালিগ্রাফি করতে চাইলে, ক্যালিগ্রাফির খত আল-মানসুব আপনাকে সবচেয়ে ভাল সাপোর্ট দিবে। আর তা আমরা ক্যালিগ্রাফির ব্যাসিক শিক্ষায় গ্রহণ করে থাকি।

হ্যাপি ক্যালিগ্রাফি ওয়ার্কিং!

ছবি নেট থেকে সংগৃহীত।
----------
বি. দ্র: প্রকৃতিতে খত আল-মানসুব আছে, এখানে তা নিয়ে কথা বলা হয়নি, তবে একটি ছবি দিলাম।

Comments

Popular posts from this blog

বাংলা ক্যালিগ্রাফি : অনুভব ও শৈলী

-মোহাম্মদ আবদুর রহীম মানুষ জীবনযাপনে বাহ্যিক প্রয়োজন পূরণের পরও মানসিক আনন্দলাভ বা আত্মপিয়াস মেটাতে কিছু দেখতে, শুনতে কিংবা ছুয়ে দেখতে চায়। তার সংস্কৃতির মধ্যে নিজকে প্রকাশ করতে কিংবা সৃজনশীল কিছু করে আনন্দ পেতে চায় এবং অন্যকে আনন্দ দিতে তার ইচ্ছে জাগে। সুতরাং বলা যায়, কোন জাতির সংস্কৃতির মধ্যে যে সৃজনশীল ও প্রতিভার পরিচয় আমরা দেখতে পাই, সেটাই শিল্পকলা।শিল্পকলার অতি প্রাচীন একটি শাখা হচ্ছে ক্যালিগ্রাফি।ক্যালিগ্রাফি শব্দটা ইংরেজি । এটা গ্রীক শব্দ ক্যালিগ্রাফিয়া থেকে এসেছে । গ্রীক শব্দ ক্যালোস এবং গ্রাফেইনের মিলিত রূপ ক্যালিগ্রাফিয়া । ক্যালোস = সুন্দর , আর গ্রাফেইন = লেখা । সুতরাং   ক্যালিগ্রাফির পরিচয় এভাবে দেয়া যেতে পারে -   হরফ বা টেকসট ব্যবহার করে চমৎকার লেখন শিল্পকে ক্যালিগ্রাফি বলে । বর্তমানে , এই আর্ট ফর্মকে বিভিন্ন দেশ , ভাষা এবং ধর্মের লোকেরা আনন্দচিত্তে গ্রহণ এবং চর্চা করে চলেছেন । পৃথিবীতে বিভিন্ন ভাষার হরফে ক্যালিগ্রাফি করা হয়েছে। আরবি, ইংরেজি, চীনা, জাপানী প্রভৃতি ভাষার হরফের ক্যালিগ্রাফি মানুষকে মোহিত ও আনন্দিত

Sulus Lipisaili (khatt al-sulus) PDF book

   Sulus Lipisaili book PDF

হ্যান্ড রাইটিং ও ক্যালিগ্রাফি

MOHAMMAD ABDUR RAHIM · SATURDAY, 30 JUNE 2018 জুমাবারের ক্লাসে আজ গোপালগঞ্জ থেকে এক ছাত্র এসেছিল, ক্লাস শেষে আবার সেখানে চলে যাবে। আরেকজন মেহমান ছিলেন এ্যাডভান্স হ্যান্ড রাইটিং স্কুলের প্রধান শিক্ষক দিলিপ স্যার। তিনি আমার খোঁজ পেয়েছেন কলকাতার আহমদ হ্যান্ড রাইটিংয়ের কাছ থেকে, তিনি ফোন দিয়ে ক্লাসে চলে আসলেন। কলকাতাসহ বাংলাদেশে তার কয়েকটি শাখা আছে হাতের লেখা সুন্দর করে শেখার। তার সাথে আলাপে অনেক বিষয় খোলাশা হল। তারা কী শেখান, কিভাবে শেখান, কেন শেখান, শেখাতে কত ফি নেন ইত্যাদি। তিনি আমার কাছ থেকে আমাদের ক্যালিগ্রাফি প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত অনেক কিছু জানলেন। হ্যান্ড রাইটিং সুন্দর করার যেসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে আছে, সেগুলো প্রধানত স্কুলের বাচ্চাদের হাতের লেখা দ্রুত এবং সুন্দর কিভাবে করা যায়, তা শিখিয়ে থাকে। পরীক্ষায় হাতের লেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। ভাল হাতের লেখার খাতা বরাবরই বেশি নম্বর পেয়ে থাকে, পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে সুন্দর হাতের লেখার ছাত্রটি জীবনে সফল হয় অনায়াসে। তাই অভিবাবকগণ সব সময় এই দিকটিকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। হাতের লেখা সুন্দর করার প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন পদ্