Skip to main content

Arabic Calligraphy Composition

ক্যালিগ্রাফির কম্পোজিশন
- মোহাম্মদ আবদুর রহীম
 

আমরা ক্যালিগ্রাফি করতে গেলে যে সমস্যাটার জন্য কাজটি মনমত হতে চায় না, সেটার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো কম্পোজিশন বা সাজানো।
পবিত্র কুরআন কপি করতে ও একে সর্বোচ্চ সৌন্দর্যের লেখনী দিয়ে প্রকাশ করতে গিয়ে ওস্তাদ ক্যালিগ্রাফারগণ কম্পোজিশন নীতিমালা ও সৌন্দর্যের সূত্র উদ্ভাবন করেছেন।
আরবি ক্যালিগ্রাফিতে কম্পোজিশনকে বলে আল-তাকবিন(ব=ওয়াও)। যুগে যুগে কম্পোজিশনের নানান প্রকার উদ্ভাবিত হয়েছে। আমরা এখানে প্রধান কয়েকটি কম্পোজিশনের কথা বলবো।
এক. আল-তাকবিন বিল হুরুফ। ক্যালিগ্রাফির হরফগুলোর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ক্যালিগ্রাফিকে সাজানো।
দুই.  আল-তাকবিন বিল তারকিব। তারকিব অর্থও সাজানো। এখানে একটি হরফ তার অবস্থানগত বৈশিষ্ট্য অনুসারে ছোট-বড়, স্ট্রোকের কারিগরি দিক খেয়াল রেখে সাজানো।
তিন. আল-তাকবিন বিল জুমাল। বাক্যের প্রকৃতি ও ভেতরের শব্দগুলোর গঠন লক্ষ্য করে সাজানো।
চার. আল-তাকবিন বিল মায়ানি। ক্যালিগ্রাফির মর্মার্থ অনুযায়ী সাজানো।
পাঁচ. আল-তাকবিন বিল তাসালসুল। একই ধরণের স্ট্রোক রিপিট করে সাজানো।


ছয়. আল-তাকবিন বিল শেকল। বিভিন্ন শেইপে সাজানো। যেমন- বায়দা(ডিম্বাকৃতি), দায়েরা(গোলাকৃতি), মুরাব্বা(বর্গাকার), মুসাল্লাস(ত্রিভুজাকৃতি)। এছাড়া তৈজসপত্র, ফলফলাদি, গাছ, মাছ, মানুষ, পশু-পাখি যেকোন আকৃতিতে হতে পারে।
সাত. আল-তাকবিন বিল ফালসাফাহ। ক্যালিগ্রাফির মেসেজ বা বার্তাটিকে দর্শনগত অনুভব দিয়ে প্রকাশ করা। এমনভাবে কম্পোজিশন করা যাতে যতক্ষণ এর আসল মেসেজটি হৃদয়ে আলোড়ন তৈরি না করছে ততক্ষণ যেন দৃষ্টি তৃষ্ণার্ত থাকে। এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কম্পোজিশনের ক্ষেত্রে।

এসব বিষয় ছাড়াও আরো যেসব টেকনিক্যাল টার্ম আমরা কম্পোজিশনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করি। সেগুলো হলো- গোল্ডেন রেসিও, সুষম বন্টন, স্পেস, রিদম, সিমিলার স্ট্রোক ও রিপিটেশন, তাল-মাত্রা-সুর-লয়-ছন্দ মোটকথা ষড়ঙ্গ। ফোকাস ও হাইলাইট  এবং লফজে জালালাহ।
আমরা প্রায়ই "লফজে জালালাহ" ও আল্লাহর গুনবাচক নাম ও সর্বনামকে কম্পোজিশনে নিচে বা এমনভাবে উপস্থাপন করি, যাতে তা আন্ডারমাইন বা অবহেলিত মনে হয়। সাবধান!!!  ক্যালিগ্রাফিতে এ বিষয়টিকে মারাত্নক অপরাধ গণ্য করা হয়। এটা যেন গুরুত্বের দিক দিয়ে আমাদের অসচেতন না করে।

ক্যালিগ্রাফির জমিনকে প্রাথমিকভাবে চারভাগে ভাগ করে এমনভাবে ক্যারেক্টারগুলোকে সাজাতে হবে, যেন ব্যালান্স থাকে। ক্যালিগ্রাফির কম্পোজিশনকে মাথাভারি মটিফ বা অলঙ্করনমুক্ত রাখা ও ক্যালিগ্রাফির শৈলির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ মটিফ দেয়া। যদি জ্যামিতিক শৈলি হয়, মটিফ ও অবজেক্ট জ্যামিতিক হলে সুন্দর হয়। আবার লতানো শৈলিতে ফুল লতা পাতার নমনীয় কোমল মটিফ ব্যবহার করা।
মোটকথা ক্যালিগ্রাফির কম্পোজিশন এমনভাবে করা, যেন সেটা অন্য কারো কাজের কপি না হয়ে যায়। আর সেটা দেখতে ভাল লাগা, মনে দোলা দিলেই সার্থক কম্পোজিশন বলে ধরে নেয়া যায়।

এখানে কম্পোজিশন বিষয়ে বিস্তারিত বলার সুযোগ নেই। আপনারা যারা এবিষয়ে আগ্রহী, একজন ওস্তাদ ক্যালিগ্রাফারের কাছে গেলে হাতে-কলমে সহজে জানতে পারবেন।

হ্যাপি ক্যালিগ্রাফি ওয়ার্কিং!!!

ছবি :
- বাহরি আল-বাঙ্গালী শৈলীতে মোহরে নবুওয়ত কম্পোজিশনে ৪৫° বরাবর করে দেখানো হয়েছে।
- শেকল কম্পোজিশন। ছবি নেট থেকে নেয়া।
- তারকিব কম্পোজিশন। ছবি নেট থেকে
নেয়া।

Comments

Popular posts from this blog

বাংলা ক্যালিগ্রাফি : অনুভব ও শৈলী

-মোহাম্মদ আবদুর রহীম মানুষ জীবনযাপনে বাহ্যিক প্রয়োজন পূরণের পরও মানসিক আনন্দলাভ বা আত্মপিয়াস মেটাতে কিছু দেখতে, শুনতে কিংবা ছুয়ে দেখতে চায়। তার সংস্কৃতির মধ্যে নিজকে প্রকাশ করতে কিংবা সৃজনশীল কিছু করে আনন্দ পেতে চায় এবং অন্যকে আনন্দ দিতে তার ইচ্ছে জাগে। সুতরাং বলা যায়, কোন জাতির সংস্কৃতির মধ্যে যে সৃজনশীল ও প্রতিভার পরিচয় আমরা দেখতে পাই, সেটাই শিল্পকলা।শিল্পকলার অতি প্রাচীন একটি শাখা হচ্ছে ক্যালিগ্রাফি।ক্যালিগ্রাফি শব্দটা ইংরেজি । এটা গ্রীক শব্দ ক্যালিগ্রাফিয়া থেকে এসেছে । গ্রীক শব্দ ক্যালোস এবং গ্রাফেইনের মিলিত রূপ ক্যালিগ্রাফিয়া । ক্যালোস = সুন্দর , আর গ্রাফেইন = লেখা । সুতরাং   ক্যালিগ্রাফির পরিচয় এভাবে দেয়া যেতে পারে -   হরফ বা টেকসট ব্যবহার করে চমৎকার লেখন শিল্পকে ক্যালিগ্রাফি বলে । বর্তমানে , এই আর্ট ফর্মকে বিভিন্ন দেশ , ভাষা এবং ধর্মের লোকেরা আনন্দচিত্তে গ্রহণ এবং চর্চা করে চলেছেন । পৃথিবীতে বিভিন্ন ভাষার হরফে ক্যালিগ্রাফি করা হয়েছে। আরবি, ইংরেজি, চীনা, জাপানী প্রভৃতি ভাষার হরফের ক্যালিগ্রাফি মানুষকে মোহিত ও আনন্দিত

বাংলা ভূখন্ডে ক্যালিগ্রাফির পদযাত্রায় শিলালিপির ভূমিকা

Muhaqqaq style -মোহাম্মদ আবদুর রহীম ক্যালিগ্রাফিকে শুধুমাত্র 'হাতের লেখা' বলে পরিচয় দিলে অসম্পূর্ণ থেকে যায় এর অর্থ। 'সুন্দর হাতের লেখা' বললে আক্ষরিক অর্থ বলা হয়। আরব সিভিলাইজেশন প্রবন্ধে বলা হয়েছে- আরবি লিপিকলা প্রবহমান নকশা এবং জটিল জ্যামিতিক ডিজাইনের সমন্বয়। এই নান্দনিক লিপিকলা সম্পর্কে আলেকজান্দ্রিয়ার দার্শনিক ও গণিতের জনক ইউক্লিদ বলেন, "একটি 'আধ্যাত্মিক কৌশল' হিসেবে ক্যালিগ্রাফিকে গত ১৩শত বছর ধরে আরবদের কলম শুধু বিশুদ্ধ এবং সমৃদ্ধ করেছে।" আসলে ক্যালিগ্রাফি হচ্ছে লিপিকলা বা লিপি দিয়ে যে শিল্পকর্ম করা হয়। বাংলা ভূখন্ডে প্রাচীন কাল থেকে যারা শাসন করেছেন, তারা সুবিধামত একটি ভাষাকে রাজভাষা করেছেন এবং নথিপত্রে তা ব্যবহার করেছেন, জনসাধারণের সাথে সংযোগের ক্ষেত্রে এভাষায় জনহীতকর কাজের পরিচিতি ফলক বানিয়েছেন। প্রাচীনকাল থেকে এ অঞ্চলে পাথরে, তাম্র ফলকে এর নিদর্শন দেখা যায়। কাগজ বা টেকসইবিহীন মাধ্যমে এই নিদর্শন পাওয়া দুষ্কর। একটা মজার বিষয় হচ্ছে, ক্যালিগ্রাফির সত্যিকার পদযাত্রা নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে প্রাচীন নিদর্শন খুজতে গিয়ে ১২০৬ সালে (১

Sulus Lipisaili (khatt al-sulus) PDF book

   Sulus Lipisaili book PDF