ঈদ ক্যালিগ্রাফি : শিল্প আধ্যাত্মিকতার কথকতা
- মোহাম্মদ আবদুর রহীম
মুসলিমের জীবনে বছরে দুই ঈদ হচ্ছে ইবাদাত ও খুশির দিন। সবাই নিজের দীলের তামান্না সম্ভাষণ ও নিজের একান্ত পদ্ধতিতে আনন্দ প্রকাশ করে থাকেন।
ক্যালিগ্রাফারগণ যুগ যুগ ধরে হাতের কারুকাজ ও আধ্যাত্মিকতার মিশ্রনে এই আনন্দ ও খুশি ক্যালিগ্রাফির মাধ্যমে প্রকাশ করে আসছেন।
বহুবছর আগে আমেরিকার বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার উস্তাদ মোহাম্মদ জাকারিয়ার সুলুস শৈলীর "ঈদ মোবারক" সে দেশের ডাক টিকিটে ছাপা হয়। বিষয়টি আমাকে খুব আলোড়িত করেছিল, সেটা ২০০১ সালের কথা। এর কয়েক বছর পর ফেসবুকে যখন ওয়ার্ল্ড ক্যালিগ্রাফারদের সাথে পরিচয় ও বন্ধুত্ব হওয়া শুরু হল, ঈদ শুভেচ্ছা জানানোর ক্যালিগ্রাফির শত শত কাজ আমাকে অভিভূত করেছে।
এবার ঈদের ক্যালিগ্রাফি যতগুলো দেখেছি, দেশে তিনজন ও বিদেশের কয়েকজনের কাজ খুব ভাল লেগেছে।
এসব কাজে শিল্প আধ্যাত্মিকতার বিষয়ে কয়েকটি কথা বলতে চাই।
বাংলাদেশে রাজশাহীর ক্যালিগ্রাফার মোস্তফা আল মারুফ নাস্তালিকে যে কাজটি করেছেন ডিজিটাল পদ্ধতিতে এটা চমতকার হয়েছে। এখানে কম্পোজিশন আইডিয়াটা মনে দোলা দেয়। আর সুলুস জালিতে জুনায়েদ ক্যালিগ্রাফারের কলমের কাজটিও আকর্ষনীয় ও শিল্পচাতুর্যে সমৃদ্ধ। ময়মনসিংহের ক্যালিগ্রাফার আমাদের ক্যালিগ্রাফি ক্লাসের প্রথমদিকের ছাত্র নিসার জামিল কুফি শৈলীতে একটু ব্যাতিক্রমী স্ট্রোকে ক্যালিগ্রাফি করেছেন। এতে অলঙ্করণ হিসেবে চাঁদ তারা মটিফ তার শিল্প আধ্যাত্মিকতার পরিচয়।
বিদেশে মরক্কোর উস্তাদ আমের বিন জাদ্দু ঐতিহ্যবাহী কায়রোয়ানী কুফিতে যে কাজটি করেছেন, তা একান্ত তার নিজস্ব রীতি। অন্যদিকে সে দেশের আরেক বিখ্যাত উস্তাদ আমর জুমনী কুফীর সবচেয়ে আধুনিক ধারায় নিজস্ব স্টাইলে "ঈদ সাঈদ" লিখেছেন। আমি তার কাজে প্রভাবিত হয়ে অনেকগুলো কাজ কপি ও নিরীক্ষা করেছি। তার এ কাজটি শিল্প আধ্যাত্মিকতার চমতকার একটি নিদর্শন।
নিউজিল্যান্ড প্রবাসী ইরাকী মহিলা ক্যালিগ্রাফার জান্না আদনান ইজেত রোটিং কম্পোজিশনে ঈদুকুম মুবারক দুইবার লিখেছেন জালি সুলুস শৈলীর জটিল রীতিতে। তিনি বুঝাতে চেয়েছেন, ঈদ বছর ঘুরে আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসে। এটি এ কাজের শিল্প আধ্যাত্মিকতা।
পাকিস্তানের ক্যালিগ্রাফার বন্ধু আবদুল রাজ্জাক রাজী প্রাচীন ভারতীয় গুলজার রীতির বিশেষ কম্পোজিশন এক হরফ দুই /তিন বার পড়ার কৌশল এখানে সুলুস শৈলীতে প্রয়োগ করে "ঈদ সাঈদ" লিখেছেন। এটি মূলত তুর্ক-ইরান-তুরানের আধ্যাত্মিক সুফি ধারায় আশেক-মাশুক একাকার দর্শনের রীতি।
তুরস্কের ক্যালিগ্রাফার যাকি আলী আল-হাশেমী ক্যালিগ্রাফির হরফের অবস্থানগত অবয়বের রূপকে সুলুস জালিতে এমনভাবে সাজিয়েছেন যা শিল্প আধ্যাত্মিকতায় পরিপূর্ণ।
এখানে ঈদ সাঈদ কথাটার সিন হরফ মুরাক্কাবাত এবং বাকি হরফগুলো মুফরাদাত(ক্যালিগ্রাফিতে শব্দের ভেতর বাইরে হরফের অবস্থানগত পরিচয়) কম্পোজিশনে করেছেন, এটা সুফি ধারার তুর্কী স্টাইল।
আমি নেট ঘাটতে গিয়ে ২০১৬ সালের আমার একটা সুলুসের কাজ পেলাম। তাতে বাঙ্গালী একটা ভাব আছে, আমাদের বাংলার সুলতানী আমলের সুলুসের প্রভাব বুঝা যায়। আর এবার যে কাজগুলো করেছি, তাতে বাহরী আল- বাঙ্গালী শৈলীর একটা কাজে (ঈদুল ফিতর) কম্পোজিশনের স্বার্থে দু'টো হরফ মুফরাদাত ও বাকিগুলো মুরাক্কাবাত রেখেছি। এধরণের কাজ ফারসি তালিক শৈলিতে আছে, সেটা খুঁজে পাচ্ছি না বলে দেখানো গেল না।
এই যে ধর্মীয় রিচ্যুয়ালকে নিয়ে নিজের মনের মত ক্যালিগ্রাফি করা, এতে শিল্প আধ্যাত্মিকতা দর্শককে আপ্লুত করে ও ইবাদাতে মগ্ন করে আর ক্যালিগ্রাফারের হৃদয়ে দোলা দেয় প্রেরণার ফল্গুধারা হয়ে।
হ্যাপি ক্যালিগ্রাফি ওয়ার্কিং!!
- মোহাম্মদ আবদুর রহীম
মুসলিমের জীবনে বছরে দুই ঈদ হচ্ছে ইবাদাত ও খুশির দিন। সবাই নিজের দীলের তামান্না সম্ভাষণ ও নিজের একান্ত পদ্ধতিতে আনন্দ প্রকাশ করে থাকেন।
ক্যালিগ্রাফারগণ যুগ যুগ ধরে হাতের কারুকাজ ও আধ্যাত্মিকতার মিশ্রনে এই আনন্দ ও খুশি ক্যালিগ্রাফির মাধ্যমে প্রকাশ করে আসছেন।
বহুবছর আগে আমেরিকার বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার উস্তাদ মোহাম্মদ জাকারিয়ার সুলুস শৈলীর "ঈদ মোবারক" সে দেশের ডাক টিকিটে ছাপা হয়। বিষয়টি আমাকে খুব আলোড়িত করেছিল, সেটা ২০০১ সালের কথা। এর কয়েক বছর পর ফেসবুকে যখন ওয়ার্ল্ড ক্যালিগ্রাফারদের সাথে পরিচয় ও বন্ধুত্ব হওয়া শুরু হল, ঈদ শুভেচ্ছা জানানোর ক্যালিগ্রাফির শত শত কাজ আমাকে অভিভূত করেছে।
এবার ঈদের ক্যালিগ্রাফি যতগুলো দেখেছি, দেশে তিনজন ও বিদেশের কয়েকজনের কাজ খুব ভাল লেগেছে।
এসব কাজে শিল্প আধ্যাত্মিকতার বিষয়ে কয়েকটি কথা বলতে চাই।
বাংলাদেশে রাজশাহীর ক্যালিগ্রাফার মোস্তফা আল মারুফ নাস্তালিকে যে কাজটি করেছেন ডিজিটাল পদ্ধতিতে এটা চমতকার হয়েছে। এখানে কম্পোজিশন আইডিয়াটা মনে দোলা দেয়। আর সুলুস জালিতে জুনায়েদ ক্যালিগ্রাফারের কলমের কাজটিও আকর্ষনীয় ও শিল্পচাতুর্যে সমৃদ্ধ। ময়মনসিংহের ক্যালিগ্রাফার আমাদের ক্যালিগ্রাফি ক্লাসের প্রথমদিকের ছাত্র নিসার জামিল কুফি শৈলীতে একটু ব্যাতিক্রমী স্ট্রোকে ক্যালিগ্রাফি করেছেন। এতে অলঙ্করণ হিসেবে চাঁদ তারা মটিফ তার শিল্প আধ্যাত্মিকতার পরিচয়।
বিদেশে মরক্কোর উস্তাদ আমের বিন জাদ্দু ঐতিহ্যবাহী কায়রোয়ানী কুফিতে যে কাজটি করেছেন, তা একান্ত তার নিজস্ব রীতি। অন্যদিকে সে দেশের আরেক বিখ্যাত উস্তাদ আমর জুমনী কুফীর সবচেয়ে আধুনিক ধারায় নিজস্ব স্টাইলে "ঈদ সাঈদ" লিখেছেন। আমি তার কাজে প্রভাবিত হয়ে অনেকগুলো কাজ কপি ও নিরীক্ষা করেছি। তার এ কাজটি শিল্প আধ্যাত্মিকতার চমতকার একটি নিদর্শন।
নিউজিল্যান্ড প্রবাসী ইরাকী মহিলা ক্যালিগ্রাফার জান্না আদনান ইজেত রোটিং কম্পোজিশনে ঈদুকুম মুবারক দুইবার লিখেছেন জালি সুলুস শৈলীর জটিল রীতিতে। তিনি বুঝাতে চেয়েছেন, ঈদ বছর ঘুরে আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসে। এটি এ কাজের শিল্প আধ্যাত্মিকতা।
পাকিস্তানের ক্যালিগ্রাফার বন্ধু আবদুল রাজ্জাক রাজী প্রাচীন ভারতীয় গুলজার রীতির বিশেষ কম্পোজিশন এক হরফ দুই /তিন বার পড়ার কৌশল এখানে সুলুস শৈলীতে প্রয়োগ করে "ঈদ সাঈদ" লিখেছেন। এটি মূলত তুর্ক-ইরান-তুরানের আধ্যাত্মিক সুফি ধারায় আশেক-মাশুক একাকার দর্শনের রীতি।
তুরস্কের ক্যালিগ্রাফার যাকি আলী আল-হাশেমী ক্যালিগ্রাফির হরফের অবস্থানগত অবয়বের রূপকে সুলুস জালিতে এমনভাবে সাজিয়েছেন যা শিল্প আধ্যাত্মিকতায় পরিপূর্ণ।
এখানে ঈদ সাঈদ কথাটার সিন হরফ মুরাক্কাবাত এবং বাকি হরফগুলো মুফরাদাত(ক্যালিগ্রাফিতে শব্দের ভেতর বাইরে হরফের অবস্থানগত পরিচয়) কম্পোজিশনে করেছেন, এটা সুফি ধারার তুর্কী স্টাইল।
আমি নেট ঘাটতে গিয়ে ২০১৬ সালের আমার একটা সুলুসের কাজ পেলাম। তাতে বাঙ্গালী একটা ভাব আছে, আমাদের বাংলার সুলতানী আমলের সুলুসের প্রভাব বুঝা যায়। আর এবার যে কাজগুলো করেছি, তাতে বাহরী আল- বাঙ্গালী শৈলীর একটা কাজে (ঈদুল ফিতর) কম্পোজিশনের স্বার্থে দু'টো হরফ মুফরাদাত ও বাকিগুলো মুরাক্কাবাত রেখেছি। এধরণের কাজ ফারসি তালিক শৈলিতে আছে, সেটা খুঁজে পাচ্ছি না বলে দেখানো গেল না।
এই যে ধর্মীয় রিচ্যুয়ালকে নিয়ে নিজের মনের মত ক্যালিগ্রাফি করা, এতে শিল্প আধ্যাত্মিকতা দর্শককে আপ্লুত করে ও ইবাদাতে মগ্ন করে আর ক্যালিগ্রাফারের হৃদয়ে দোলা দেয় প্রেরণার ফল্গুধারা হয়ে।
হ্যাপি ক্যালিগ্রাফি ওয়ার্কিং!!
Comments
Post a Comment