মুসতলাহাতুল খত্
ক্যালিগ্রাফির পরিভাষা
_________
খত্ গুলজার
গুলজার ক্যালিগ্রাফি
২০০৯ সালের কথা। ইরান সরকারের আমন্তণে তেহরানের খোমেনী মোসাল্লায় ১৬তম কুরআন ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনিতে অংশগ্রহণ করি। সেখানের অনেকগুলো স্মৃতির মধ্যে একটি হলো গুলজার ক্যালিগ্রাফির দেখা পাওয়া। প্রদর্শনিতে ১৫ দিনের মত আমরা তেহরানের ফেরদৌসি হোটেলে ছিলাম। এ সময়ে সেখানে আরো ৫টি ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনিতে অংশগ্রহণ করি। এর ভেতর ৬ষ্ঠ আন্তর্জাতিক বিসমিল্লাহ ক্যালিগ্রাফি প্রতিযোগিতার বিচারক প্যানেলের সদস্য থাকার সুযোগ হয়। যাহোক, তেহরানে ছোট বড় বেশ কয়েকটি ক্যালিগ্রাফির জাদুঘর আছে। তবে তেহরান জাতীয় ক্যালিগ্রাফি জাদুঘরটি সেরা। সেখানে হুনারমান্দে খোশনবিশি ইরানের স্থানীয় ধারাগুলোর ভেতর খোশনবিশি খত্তে গুলজার বিভাগটিতে প্রচুর কাজ ছিল। বিশেষকরে মাহমুদ জয়নুদ্দিন, মোহাম্মদ বাকের জরিন কলম, মোহাম্মদ কাজেম, মোহাম্মদ আলি, শেখ আলি সাখাফের কাজগুলো অসাধারণ লেগেছিল। গুলজার আসলে ফুল সজ্জিত ক্যালিগ্রাফি। ইরানের গুলজার নামক স্থান, যেখানে একধরণের বিচিত্র রঙের বাহারি ফুলের দিগন্ত বিস্তারি মাঠ ময়দান রয়েছে। ধারণা করা হয়, সেখানকার ক্যালিগ্রাফারগণ এই অভিনব ফুল সজ্জিত ক্যালিগ্রাফি উদ্ভাবন ও প্রচলন করেন। এটি প্রাথমিকভাবে নাস্তালিক শৈলিকে ফুল সজ্জার মধ্য দিয়ে ১৩ শতকের শেষ দিকে শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতা সাফাবি, আসফার, জেনদিয়া ও কাজার শাসনামলে অব্যাহত থাকে। আধুনিক সময়ে মিরজা হুসাইন আমিরখানি, মিরজা গোলাম হুসাইন প্রমুখ ওস্তাদ ক্যালিগ্রাফারগণের গুলজার বিখ্যাত।
বাঙলা ভুখন্ডে মুঘলদের শাসনামলে এটা চালু হয় এবং ক্রমশ জটিল কম্পোজিশনে রুপান্তরিত হয়। বাঙলার ক্যালিগ্রাফারদের মধ্যে পুরান ঢাকার বেচারাম দেউড়ির মির্জা বাহাদুর হুসাইন ছিলেন গুলজার শৈলির বিখ্যাত ওস্তাদ।
বাঙলায় ক্যালিগ্রাফির সর্বনাশ হয়েছে ব্রিটিশ খ্রিস্টান শাসকদের হাতে । এসময় ক্যালিগ্রাফারগন জীবিকার তাগিদে পেশা বদল করতে বাধ্য হন। ফলে ক্যালিগ্রাফির অসাধারণ সব শৈলী লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যায়। বাংলাদেশ ক্যালিগ্রাফি ইনস্টিটিউট পুনরায় আমাদের ঐতিহ্যবাহী শৈলীগুলো পুনরুদ্ধার, উন্নয়ন ও সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে।
ছবি- বাহরি গুলজার শৈলীর একটি কাজ।
Comments
Post a Comment