ক্যালিগ্রাফি ও ফন তাশকীলী
আমরা জানি শিল্পকলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ক্যালিগ্রাফি। অন্যদিকে জগতে দৃশ্যমান শিল্পকলাও বিশাল জায়গা জুড়ে আছে। আর দৃশ্যমান শিল্পকলার মধ্যে ক্যালিগ্রাফি একটা বিশেষ স্থান দখল করে আছে। আমরা এখানে ক্যালিগ্রাফি সম্পর্কিত ”দৃশ্যমান শিল্পকলা” নিয়ে কিছু কথা বলব।
আরবিতে শিল্পকলার সবগুলো বিষয়ে বিস্তারিত একাডেমিক লেভেলে শেখানো হয়। আমরা যেহেতু আরবি ক্যালিগ্রাফি নিয়ে কাজ করি, এ জন্য শিল্পের অন্য অংশগুলো নিয়ে কমন ধারণা থাকা জরুরী।
আর্ট বা শিল্পকলাকে আরবিতে বলে আল-ফান্নুল আরাবি বা আল-ফান্নুল মারয়ি বা আল-ফুনুনুল আরাবিয়াহ , সংক্ষেপে ফন/ফান্ন আর শিল্পীর আরবি ফান্নান।
দৃশ্যমান শিল্পকলা বা ভিজ্যুয়াল আর্টকে আরবিতে আল-ফান্নুল বাসারি বলে। এর ভেতর আল-ফুনুনুল যুখরুফিয়াহ অর্থাৎ নকশাকলা, আল ফান্নুল তাশকীলী বা ফিগারেটিভ আর্ট অন্তর্ভূক্ত। এই ফন তাশকীলীর একটা অংশ আল-ফান্নুল বিলাসতিকি বা প্লাস্টিক আর্ট আছে। এছাড়া ফান্নুল তাসবির(ফটোগ্রাফি), আল-রসম বা আল-তাসবির আল ঝাইতি(পেইন্টিং/ওয়েল পেইন্টিং), আল-নাহত(ভাষ্কর্য), আল-ফান্নুল মেমারি(স্থাপত্যকলা) রয়েছে।
তবে আরব আর্টের ভেতর মোটাদাগে সরাসরি ফিগার বা অবয়বধর্মী আর্ট ও মটিফ(মূল আকৃতি ভেঙ্গে প্রতিকধর্মী উপস্থাপন)ধর্মী বিকল্প এক শিল্পকলা পৃথকভাবে চর্চা হয়ে আসছে।
যারা ইসলামের ছবি আকার বিধানকে নমনীয় বা উপেক্ষা করে শিল্পচর্চা করেন তাদের মাঝে ফিগারেটিভ(প্রাণী চিত্রাঙ্কন) আর্ট চর্চিত হতে দেখা যায়। অন্যদিকে যারা প্রাণীচিত্র আঁকতে চান না, তারা নকশা ও মটিফধর্মী বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে চর্চা করেন। এদের মধ্যে একটি বিমূর্ত ও প্রচ্ছন্ন অংকনরীতিতে কাজ করতে দেখা যায়। যেমন ১৫ শতকের বাতিদান ও গ্লাসওয়ারে যে ফুলের নকশা আছে, তা আপনি সরাসরি গোলাপ, জবা, জেসমিন ইত্যাদি নামে পৃথক করতে পারবেন না, সেটা ফুলের মত দেখতে কিন্তু নির্দিষ্ট কোন ফুল বলা যায় না। এটা ইসলামের তৌহিদবাদী বিশ্বাস থেকে এসেছে।
অন্যদিকে ক্যালিগ্রাফিকে আরবিতে বলে খত। আর ক্যালিগ্রাফারকে বলে খাত্তাত। আরব বিশ্বের বহু আর্টিস্ট(ফান্নান) পেইন্টিং(আল-তাসবির আল-ঝাইতি) করেন আরবি হরফ ব্যবহার করে, কখনও ক্যালিগ্রাফি কম্পোজিশন দিয়েও পেইন্টিং করেন। তবে এটাকে তারা ফন তাশকীলী বলেন। আর শুধু কলম দিয়ে বিধিবদ্ধ শৈলীর কম্পোজিশনকে ক্যালিগ্রাফি বা খত বলেন তারা।
সমকালীন ইরাকের দিয়া আল আজামী, উইস্সাম শতকাত, মাসউদী, বাহরাইনের মোহসেন গারীব, পাকিস্তানের বিন কালান্দার, বাংলাদেশের সবিহ উল আলম, আমিনুল ইসলাম আমিন প্রমুখ ফন তাশকীলীর মৌলিক উদাহরণ। আর ইরাকের আব্বাস বাগদাদী, তুরস্কের দাউদ বেকতাশ, ফেরহাত কারলু, বাংলাদেশের মোকতার শোকদার, মাসউদ আল মাক্কির কথা বলা যায়, তারা ক্যালিগ্রাফির মৌলিক উদাহরণ।
হ্যাপি ক্যালিগ্রাফি লারনিং।
Comments
Post a Comment