ঈদ : শৈশব-কৈশোরে
_________________
আর দুয়েক দিন পর পবিত্র ঈদুল ফিতর ১৪৪৫। আমাদের শৈশবে মহল্লায় আমরা ছেলে- বুড়ো- যুবকেরা সবাই একসাথে মসজিদে ইফতার করতাম। ইফতারের তোড়জোড় আসর সালাতের পর শুরু হয়ে যেত। পবিত্র রমজান শুরু হওয়ার আগেই মসজিদের জুমার নামাজের আগে ইফতার কে কে কয়দিন দিবে এবং প্রতিদিন যারা মহল্লার ছেলে বুড়োরা ইফতার করবে তারা নিজেদের ইফতারি নিয়ে আসবে। আসলে ঘটনা ঘটতো অন্যরকম। প্রতি বাড়ি থেকেই বেশি ইফতার পাঠানো হতো সত্তর গুণ সওয়াবের আশায়। বাড়ির মহিলারা মনে করতেন, পুরুষেরা নামাজ ও ইফতার করবে মসজিদে। সুতরাং সেভাবে আমাদের মনোভাব গড়ে ওঠে। আমরা মাটির সানকিতে ইফতার করতাম আর এগুলো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন আমাদের কিশোরদের করতে হত। সেটা আমরা মনের আনন্দেই করতাম। আমাদের সময়ে ইফতারের প্রধান আইটেম ছিল ভেজা চিড়া ও নারকেল কুরা সহযোগে খেজুর গুড় আর ছোলা বুট। কখনও আদা কুচি দিয়ে কাঁচা ছোলা থাকত। ভালো খেজুর কদাচিৎ পাওয়া যেত, তবে দেশি খেজুর, বরই, আমড়া, পেয়ারা, কলা, সফেদা কখনও আখের টুকরো পেয়েছি, পেয়াজু, বেগুনি, ডালের বড়া থাকত আর লেবুর শরবত। কখনও তরমুজ, বাঙ্গি/ফুটি। নতুন ধান ওঠার সময়ে ইফতারের বিশেষ পদ ছিল নবান্ন(আতপ চালের গুঁড়ো, গুড়, নারকেল কুরা, লেবু, আদা কুচি, লবন ও এলাচ দিয়ে অসাধারণ এক মিশ্রন) ও পিঠা। আহা! সেইদিন কোথায় হারিয়ে গেল!
ঈদের চাঁদ দেখার পর আনন্দ মিছিল আর পটকা ফুটানোর প্রতিযোগিতা হত। মাগরিবের পর থেকে গোরস্থানে বাবা চাচাদের আঙ্গুল ধরে দাদা দাদী ও আত্মীয়স্বজনের কবর জিয়ারত করতে যেতাম। মুরব্বিরা মুনাজাতে কেঁদে দাড়ি ও জামা ভিজিয়ে ফেলতেন, আমার বড়চাচা ছিলেন ভীষণ রাগী আর পাষান দীলের, তাকে কেউ কখনো কাঁদতে দেখে নাই, অথচ কদর রাতে আর চানরাতে গোরস্থানে তিনি শিশুর মত ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতেন আর বারবার বলতেন, রব্বের হামহুমা কামা রব্বাইয়ানি ছগিরা। ও আল্লাহ! আমার আব্বাজান আম্মাজানকে মাফ করে দাও, তাদের বেহেস্ত নসিব করো, কবরকে জান্নাতের টুকরো বানাও। বলতেই থাকতেন আর আমরা আমিন বলতাম। একসময় মনে হত তিনি মনে হয় এবছরের জন্য কবুল ও মঞ্জুর করিয়ে ফেলেছেন। তারপর প্রায় সারারাত আমরা মহল্লার গলিতে ফুর্তি করে বেড়াতাম।
Eidukum Mubarak, style- sunbuli masudi, by calligrapher Masud bin hafej al makki |
আমাদের শৈশবে চাঁদ দেখার কমিটির নাম ছিল "রুইয়াতে হেলাল কমিটি"। একবার আমার ও বন্ধুদের সাক্ষে ঈদ হয়েছিল, তখন খুলনায় কমিটির সদস্য ছিলেন খুলনা আলিয়া মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সালেহ ওস্তাদ। তিনি মাদ্রাসায় ফোন করে জানতে চাইলেন কেউ ঈদের চাঁদ দেখেছে কি না। দপ্তরি আমার নাম বলায়, কিছুক্ষণের মধ্যেই জেলা প্রশাসকসহ তিনি মাদ্রাসায় চলে আসলেন, তিনি টাউন জামে মসজিদ খতীব ও পেশ ইমাম হিসেবে সেখানে কোয়ার্টারে পরিবার নিয়ে থাকতেন। তো আমরা চাঁদ দেখার বর্ণনা পাশের কক্ষ থেকে একে একে এসে আলাদা ভাবে দিলাম । যেহেতু চাঁদ কোথায় কিভাবে বাঁকা হয়ে উঠেছিল তা প্রত্যেকে বর্ননায় এক রকম হল। তখন ঢাকায় ফোন করে চাঁদ দেখার সংবাদ দেয়া হয়। পরে শোনা যায় যশোর থেকেও দেখা গিয়েছিল।
এখন এসব হয় কিনা জানিনা।
সবাইকে পবিত্র ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।
Eid Mubarak, style - Muhaqqaq hasami, by calligrapher ustad Hisam Selmo. |
তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম সালিহাল আমাল।
Comments
Post a Comment