Muhaqqaq style |
-মোহাম্মদ আবদুর রহীম
ক্যালিগ্রাফিকে শুধুমাত্র 'হাতের লেখা' বলে পরিচয় দিলে অসম্পূর্ণ থেকে যায় এর অর্থ। 'সুন্দর হাতের লেখা' বললে আক্ষরিক অর্থ বলা হয়। আরব সিভিলাইজেশন প্রবন্ধে বলা হয়েছে- আরবি লিপিকলা প্রবহমান নকশা এবং জটিল জ্যামিতিক ডিজাইনের সমন্বয়। এই নান্দনিক লিপিকলা সম্পর্কে আলেকজান্দ্রিয়ার দার্শনিক ও গণিতের জনক ইউক্লিদ বলেন, "একটি 'আধ্যাত্মিক কৌশল' হিসেবে ক্যালিগ্রাফিকে গত ১৩শত বছর ধরে আরবদের কলম শুধু বিশুদ্ধ এবং সমৃদ্ধ করেছে।" আসলে ক্যালিগ্রাফি হচ্ছে লিপিকলা বা লিপি দিয়ে যে শিল্পকর্ম করা হয়।
বাংলা ভূখন্ডে প্রাচীন কাল থেকে যারা শাসন করেছেন, তারা সুবিধামত একটি ভাষাকে রাজভাষা করেছেন এবং নথিপত্রে তা ব্যবহার করেছেন, জনসাধারণের সাথে সংযোগের ক্ষেত্রে এভাষায় জনহীতকর কাজের পরিচিতি ফলক বানিয়েছেন। প্রাচীনকাল থেকে এ অঞ্চলে পাথরে, তাম্র ফলকে এর নিদর্শন দেখা যায়। কাগজ বা টেকসইবিহীন মাধ্যমে এই নিদর্শন পাওয়া দুষ্কর। একটা মজার বিষয় হচ্ছে, ক্যালিগ্রাফির সত্যিকার পদযাত্রা নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে প্রাচীন নিদর্শন খুজতে গিয়ে ১২০৬ সালে (১১২৭ শক) সংস্কৃত হরফে একটি উৎকীর্ণলিপির নমুনা পাওয়া গেছে কামরূপ অঞ্চলে। আসামের ব্রহ্মপুত্র নদের উত্তর তীরে প্রাপ্ত এই শিলালিপিটিতে একটি চমকপ্রদ তথ্য আছে, "১১২৭ শক, মধুমাসের(সম্ভবত চৈত্রমাস) ১৩তম দিবসে কামরূপ তুর্কীদের আক্রমণে পদানত হয়।" কিন্তু এই উৎকীর্ণ লিপিটিতে তথ্য থাকলেও এর প্রয়োগ বৈশিষ্ট্য একেবারে আটপৌরে, এতে কোন শিল্পের ছোঁয়া নেই। অথচ তার বহুকাল পূর্ব থেকে বাঙ্গালায় পাথর খোদাই কাজ, বিশেষ করে উৎকীর্ণ মূর্তি শিল্পমানের শীর্ষে অবস্থান করছিল। আসলে নারীচিত্র অঙ্কন বা খোদাই, যা শিল্পকলার জৈবিকরস সিঞ্চন করলেও, ক্যালিগ্রাফির হরফে তা ফুটিয়ে তোলার বিষয়টি সেখানে দেখা যায় না। অন্যদিকে, বাঙ্গালায় মুসলিম শাসকদের সময় থেকে খোদাই কর্মে ক্যালিগ্রাফির নান্দনিক বা সৌন্দর্য প্রয়োগ সাধারণ বিষয় হয়ে দাড়ায় এবং সেটা আরবি-ফারসি লিপির মাধ্যমে হয়েছে। এমনও দেখা গেছে, একপিঠে মূর্তি উৎকীর্ণ এবং অন্যপিঠে চমৎকার আরবি ক্যালিগ্রাফি উৎকীর্ণ করা হয়েছে। মুসলিম শাসনের আগে স্থাপত্য অলঙ্করণে উৎকীর্ণ মুর্তি বা টেরাকোটায় মুর্তির আধিক্য রয়েছে এবং ফুল-লতা-পাতার ব্যবহার গৌন থেকেছে।
অন্যদিকে মুসলিম শাসন শুরুর পর এমন কোন উল্লেখযোগ্য ইমারাত পাওয়া যাবে না যেখানে ক্যালিগ্রাফির ব্যবহার অনুপষ্থিত। সুতরাং বাংলা ভূখন্ডে ক্যালিগ্রাফির প্রচলন করেন মুসলিম শাসকরা। এই পদযাত্রায় মুসলিম তুর্ক-আফগান শাসকদের অবদান অসামান্য। ১২০৫ সালে তুর্কী বংশোদ্ভুত ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজীর বাঙালা বিজয়ের মাধ্যমে শিলালিপিতে আরবি-ফারসি ক্যালিগ্রাফির যাত্রা শুরু হয়। সুলতানী ও মোঘল আমলের (১২০৫-১৭০৭ ইসায়ি) অসংখ্য শিলালিপির মধ্যে প্রায় চারশত নিদর্শন পাওয়া গেছে। সুলতানী আমলের(১২০৫-১৫৬৫ ইসায়ি) অধিকাংশ শিলালিপি আরবিতে এবং মোঘল আমলের(১৫৬৫-১৭০৭ ইসায়ি) অধিকাংশ শিলালিপি ফারসিতে উৎকীর্ণ করা হয়েছে। এসব শিলালিপি মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকা, মাজার, কবরগাহ, পুল, প্রশাসনিক ইমারাত ইত্যাদিতে স্থাপন করা হয়েছে। অধিকাংশ ফলকে কুরআন-হাদীসের বাণী, সমকালীন বিষয়, স্থাপণের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে। এতে সে সময়ের ধর্মীয়-রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা করা যায়। বিশেষকরে ক্যালিগ্রাফির উন্নয়ন, গতি-প্রকৃতি এবং এর শৈল্পিক প্রয়োগ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। সুলতানী আমলের শিলালিপির বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এতে তুরস্কের সমকালীন ক্যালিগ্রাফির প্রভাব ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পাথর কিংবা পোড়ামাটিতে উৎকীর্ণ ক্যালিগ্রাফি ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্মারক এবং সমসাময়িক তথ্য উন্মোচনে ফলপ্রসু মাধ্যম। বাঙ্গালায় রাজনৈতিকভাবে মুসলিম শাসনের গোড়াপত্তন হয় ১২০৫ ইসায়িতে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বখতিয়ার খালজির হাতে। এ সময় দিল্লীর সম্রাট ছিলেন কুতব উদ্দিন আইবেক। কিন্তু তারও বহু আগে বাঙ্গালায় মুসলিম জনসমাজ ছিল। রাজা লক্ষণ সেনের দরবারে শেখ জালাল উদ্দিন তাবরেজী নামে একজন মুসলিম বিদ্বান ব্যক্তি সভাসদ ছিলেন। লক্ষণ সেনের আরেক সভা-পণ্ডিত হলায়ুধ মিশ্র রচিত 'শেখ শুভোদয়া'য় আমরা শেখ জালাল উদ্দিনের বর্ণনা দেখতে পাই। রাজসভায় একজন মুসলমান পণ্ডিত থাকার অর্থ হল রাজ্যে একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলিম জনগোষ্ঠির বিদ্যমান থাকার প্রমাণ।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত বাঙ্গালার উৎকীর্ণ লিপির সবচেয়ে প্রাচীন নমুনাটি হচ্ছে লালমনিরহাটের হারানো মসজিদ ইস্টকলিপি। পোড়ামাটির তৈরি ইটে উৎকীর্ণ করে কালেমা তৈয়্যবা এবং ৬৯ হিজরি লেখা হয়েছে।
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা লালমনিরহাটের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামদাস গ্রাম। এখানেই আবিষ্কৃত ৬৯ হিজরিতে নির্মিত মসজিদটির সামনে ফসলের মাঠটি একদা ছিল চকচকার বিল। এলাকার প্রবীণ মানুষের কাছে স্থানটি আজও সাগরের ছড়া নামে পরিচিত, যার অনতিদূরে তিস্তা নদীর অবস্থান। ব্রহ্মপুত্র-তিস্তা অববাহিকাকে বলা হয় পৃথিবীর প্রাচীনতম অববাহিকাগুলোর একটি। সুতরাং এই অববাহিকায় ৬৯ হিজরি বা ৬৪৮ খ্রিষ্টাব্দে একটি মসজিদ নির্মাণের ঘটনা বিস্ময় জাগানিয়া হলেও সেটা অস্বাভাবিক নয়। ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক টিম স্টিল বলেন, বাংলাদেশ ভূখণ্ডের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলজুড়ে যে প্রাচীন সভ্যতা খ্রিষ্টপূর্ব সময় থেকে গড়ে উঠেছিল, তার সঙ্গে প্রাচীন রোমান ও আরব-সভ্যতার সম্পর্ক ইতিহাসের একটি স্বাভাবিক ঘটনা। সভ্যতার সঙ্গে সভ্যতার এই সম্পর্কের সূত্র ধরেই আরব বণিকেরা লালমনিরহাটের ওই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন বলে মনে করেন টিম স্টিল।
গবেষকরা ঐ ইস্টকলিপিতে তারিখের স্থলে একটি বিষয় এড়িয়ে গেছেন। "সানাত ১, ৬৯" অর্থাৎ বছরের ১ম মাস(মহররম), ৬৯ হিজরি। ৬৯১ ইসায়িতে মসজিদটি নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে গবেষকদের মধ্যে বিতর্ক থাকলেও ইস্টকলিপির সঠিক বয়স নির্ধারণে রাসায়নিক পরীক্ষার কথা জানা যায়নি। এক্ষেত্রে একটি বিষয় উল্লেখ্য, এর লিপি বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ইসলামের প্রথম শতকে যে লিপিসমূহ ছিল, বিশেষ করে ইরাক থেকে বাঙালার দিকে যে লিপি বিস্তৃতি লাভ করেছিল, তাকে 'খত আল বাহরি' বলা হয়। পরবর্তিতে একে 'বিহারী লিপি' বলে ইতিহাসে উল্লেখ করা হয়েছে। এ নামকরণের দুটো কারণ আমরা খুজে পাই। এক. সমূদ্রপথে এ লিপির খোদাই কারিগর ও লিপিকর বাঙ্গালায় এসেছিলেন এবং সমূদ্রের ঢেউয়ের মত এলিপির গতিপ্রকৃতি ছিল। দুই. বাঙ্গালার পশ্চিম-উত্তর অংশে বিহার এলাকায় পাথরে খোদাই ও পুথিপত্র রচনায় একদল ক্যালিগ্রাফার এ লিপিটিকে জনপ্রিয় করে তোলেন। এজন্য স্থান নামের সাথে এর নামকরণ হয়েছে।
বর্তমান সময়ের ইরাকের বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফি গবেষক ইউসুফ জিন্নুনের মতে, সমুদ্র পথে এলিপির বাঙ্গালায় আগমণ এবং উন্নতি সাধনের কারণেই একে 'খত আল বাহরি' নাম দেয়া হয়। খত আল বাহরি অর্থ- সমুদ্র লিপি।
আরেকটি বিষয় এলিপিটির আলিফের নিচের অংশ বামে একটু বেশি ঝুলানো। এ ধরণের আলিফকে বলা হয় "আলিফ মুশা'য়ার"। উৎকীর্ণ লিপিতে আলিফ মুশা'য়ার প্রয়োগ করা ইসলামের প্রথম শতকের লিপির একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য ছিল।
গবেষকগনের মতে, বাঙ্গালায় কালোপাথর (ব্লাক ব্যাসল্ট) বা বেলে পাথরে (স্যান্ড স্টোন) উৎকীর্ণ ক্যালিগ্রাফির নমুনা সমূহ সুলতানী আমল (১২০০ ইসায়ি) থেকে শুরু হয়েছে। বাঙ্গালায় ইমারাতে ব্যবহৃত ব্লাক ব্যাসল্ট এসেছে ততকালিন বিহার এবং বর্তমানে ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের রাজমহলের কালো আগ্নেয়শিলা পাহাড় থেকে। আহমদ হাসান দানী তার "মুসলিম আর্কিটেকচার ইন বেঙ্গাল" গ্রন্থে লিখেছেন, মালদা জেলার রাজমহল পাহাড় থেকে ব্লাক ব্যাসল্ট আনা হত এবং কদাচিৎ বিহার থেকে স্যান্ড স্টোন এবং গ্রানাইট আনা হত। এছাড়া কখনও খোরাসান থেকে ব্লাক ব্যাসল্ট আনা হত বলেও ইতিহাসে পাওয়া যায়।
প্রশ্ন হল, ইস্টক লিপি উৎকীর্ণের বিষয়টির সাথে ব্লাক ব্যাসল্ট ও স্যান্ড স্টোনের সম্পর্ক কী? বাঙ্গালার মুসলিম শাসনের আগের কোন ব্লাক ব্যাসল্ট বা স্যান্ড স্টোনের ওপর আরবি ক্যালিগ্রাফির উৎকীর্ণ নমুনা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কিন্তু এর থেকে প্রাচীন পোড়া মাটির ইট এবং তাতে উৎকীর্ণ লিপির নমুনা আছে।
বাঙ্গালায় তুর্ক-আফগান শাসক এবং তাদের সাথে আগত পাথরে উৎকীর্ণ লেখা ও নকশা খোদাইয়ের দক্ষ শিল্পীরা রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় জীবন অতিবাহিত করেছেন। এজন্য সুলতানী আমল ও মোগল আমলের ইমারাতে তাদের শিল্পকর্মের বিস্তৃত নমুনা দেখা যায়।
রাজশাহীর সুলতানগঞ্জে প্রাচীন একটি সেতুতে বাঙ্গালার দ্বিতীয় সুলতান আলাউদ্দিন ওয়াদ্দুনিয়া (আলি মর্দান খালজী, ১২১০-১২১৩ ইসায়ি) সময়ের ব্লাক ব্যাসল্টে উৎকীর্ণ ফার্সি ভাষায় ক্যালিগ্রাফি ফলক পাওয়া যায়। বর্তমানে এটি বরেন্দ্র জাদুঘরে সংরক্ষিত। এর লিপি বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে গবেষক অধ্যাপক ইউসুফ সিদ্দিক বলেন, এটা তাওকি লিপি। এ প্রবন্ধ লেখকের মতে, এর খাড়া রেখা ও আনুভূমিক রেখার গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ করে একে খত আল বাহরির স্থাপত্য সংস্করণ বললে অধিক যুক্তিযুক্ত হয়। প্রাচীন তাওকি লিপিতে শব্দের শেষ হরফের শেষাংশ বা লেজ পরবর্তী শব্দের প্রথম হরফের সাথে বিশেষ নিয়মে লেগে যায়। যেটা এ নমুনায় দেখা যায় না। অন্যদিকে আনুভূমিক রেখার শেষাংশ পুষ্ট হয়ে ঢেউয়ের মত ভাব দেখা যায় বাহরি লিপিতে। এ নমুনায় সেটা বেশ পাওয়া যায়। তিন লাইনের এ শিলালিপিতে লাইন বিভক্তি রেখা আছে। এতে জমিন খোদাই এবং হরফ উচু রাখা হয়েছে।
কালো পাথরে পলিশ(পৃষ্ঠদেশ মসৃণ করার পদ্ধতি) করলে কালো চকচকে ভাব আসে। এর ওপর খোদাই করলে, খোদাই অংশ ছাই রঙের সাদাটে ভাব হয়। হরফ খোদাই করলে অল্প সময়ের মধ্যে একটি নামফলক তৈরি করা যায়। কিন্তু সুলতানী আমলের প্রায় সবগুলো এবং মোগল আমলের অধিকাংশ পাথরে জমিন খোদাই করা হয়েছে, ফলে হরফ এবং বিভক্তি রেখা জমিন থেকে উচু হয়েছে। এটা বলা যত সহজ, হাতে করা ততটাই কঠিন। এ বিষয়টি চিন্তা করলে দক্ষতার উচ্চমান অনুধাবন করা যায়। পাথর খোদাই কাজ দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়। প্রথমে একজন ক্যালিগ্রাফার পুরো লেখাটি(টেক্সট) পাথরে কালি বা সিসার কলম দিয়ে একে দেন, তারপর উস্তাদ খোদাইকার ছেনি (খোদাই করা লোহার ছোট বাটালি ধরণের যন্ত্র) দিয়ে হরফের আউট লাইন বের করে দেন, একে কাটাই বলে। দ্বিতীয় পর্যায়ে হরফের আউটলাইন ধরে জমিনকে ৫ থেকে ৮ মিলিমিটার পর্যন্ত খোদাই করে একজন সাগরেদ বা নবিশ খোদাইকার। একে চটানো বলে। খোদাই কাজে ওস্তাদ খোদাইকারের ওপরই ক্যালিগ্রাফির সৌন্দর্যের মান রক্ষার দায়িত্ব বর্তায়। আর এটা দু'এক বছরে অর্জন করা সম্ভব নয়। বাঙ্গালার সুলতানী আমলের মাঝামাঝি সময় থেকে খোদাই দক্ষতা অসাধারণ পর্যায় পৌছেছিল। কিছু কিছু নমুনায় যিনি টেক্সট একেছেন তিনিই খোদাই করেছেন বলে প্রতীয়মান হয়।
পশ্চিম বঙ্গের বিরভুমের সিয়ানে একটি খানকায় সুলতান গিয়াস উদ্দিন ইওদ খালজীর (১২২১ ইসায়ি) সময়ের একটি নামফলক পাওয়া গেছে। যেটার লিপিশৈলিতে তেমন পার্থক্য নেই সুলতানগঞ্জের শিলালিপি থেকে।
রাজশাহীর নওহাটায় একটি অজ্ঞাতনামা মসজিদ ও মাদ্রাসা থেকে বিদ্রোহী খালজী সেনা নায়ক বলাকা খানের (১২২৯-১২৩০ ইসায়ি) সময়ের একটি শিলালিপি উদ্ধার করা হয়। বরেন্দ্র জাদুঘরে বর্তমানে সেটি সংরক্ষিত। লিপির ভাষা ফারসি। লিপি শৈলি সম্পর্কে সুষ্পষ্ট কোন মন্তব্য কেউ করেননি, তাওকি ও সুলুস লিপির মিশ্রন বলে অনেকে মত দিয়েছেন। এ প্রবন্ধ লেখকের মতে, পূর্বের শিলালিপি দুটি থেকে এর বিশেষ পার্থক্য হচ্ছে, উৎকীর্ণ বাহরি লিপির এটি একটি বলিষ্ঠ নমুনা। আলিফ মুশা'য়ার এবং আলিফ মুরাক্কাব বা আলিফ নেহাইয়্যাহ(হরফের সাথে মিলিত আলিফ)সহ ত্বয়া, কাফ, লামের আলিফের(খাড়া রেখা) মাথায় ডানদিকে নিশানাকৃতির জুলফ(আকশির মত তিনকোনা পতাকা) বিজয় অনুভব এবং আনুভূমিক হরফের শেষ প্রান্ত বাহরি লিপির পূর্ণ বৈশিষ্ট্য ধারণ করেছে। এতেও জমিন খোদাই(রিভার্স খোদাই) করা হয়েছে। আয়তাকার প্যানেলের এধরণের কাজ তুর্কি ধারার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ শিলালিপির ক্যালিগ্রাফার এবং খোদাইকার তুর্কি বংশোদ্ভুত বা ঐ ধারার কাজ সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিফহাল বলে অনুমান করা যায়। এ শিলালিপির মিম মুরাক্কাব আউয়াল(মিলিত প্রথম মিম) মাথার শুরু এবং শেষ সংযুক্ত নয়। জিমের মাথার(র'স) প্রথমাংশ বৃত্তাকার ও ভারি। কাফ মুরাক্কাবের আলিফের পেট বা বুক বরাবর ডানপাশে আল সুওবানি(অজগরাকৃতি রেখা) শিলালিপিটিকে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছে। এ তিনটি শিলালিপির আলোচনা থেকে খালজী শাসনামলের (১২০৩-১২৩০ ইসায়ি) ক্যালিগ্রাফির শৈলি বিষয়ক একটি চিত্র পাওয়া যায়। স্থাপত্যে বাহরি লিপির প্রয়োগ এবং এর দ্রুত উন্নয়নে ক্যালিগ্রাফার ও খোদাইকারের আন্তরিকতা এবং নিপুনতা অর্জনে একনিষ্ঠতা প্রশংসনীয়।
ইলিয়াসশাহী (১৩৪২-১৪৮৭ ইসায়ি) শিলালিপিতে খাটি আরবি শৈলিতে ফিরে যাওয়ার একটি প্রয়াস লক্ষ্য করা যায়। সুলুস লিপির অসাধারণ প্রয়োগ হয়েছে এসময়।
হাদরাত পান্ডুয়ার আদিনা মসজিদ ক্যালিগ্রাফি (১৩৭৪ ইসায়ি) সুলুস লিপির অন্যতম সেরা উদাহরণ। মিহরাবে, দেয়ালে ক্যালিগ্রাফির সাথে ফুলেল অলংকরণের ব্যবহার আরো সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে একে। মিহরাবে উৎকীর্ণ সুলুস লিপিটির নান্দনিক রূপ-সৌন্দর্য সমসাময়িক তুর্কি সুলুস লিপির সাথে পূর্ণ সামঞ্জস্যশীল। তবে মসজিদের অন্য দেয়ালে উৎকীর্ণ সুলুস লিপিতে বেশ পার্থক্য আছে। এতে ধারণা হয়, মসজিদটিতে একাধিক ক্যালিগ্রাফার কাজ করেছেন। মসজিদে মহিলা নামাজীদের প্রবেশদ্বারের উপরে কালিমা তৈয়্যবার সুলুস শৈলির কম্পোজিশনটি বাঙ্গালায় মধ্যযুগের উৎকীর্ণ ক্যালিগ্রাফির অন্যতম সেরা কাজ।
অন্যদিকে নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে গাজীপীরের মাজার থেকে প্রাপ্ত শিলালিপিটি সুলুস শৈলি ভেঙ্গে তুগরায় রূপান্তর বলা যায়। খাড়া হরফের মাথাগুলো মোটা আর ভারি। বাশের বেড়ার মত হরফের খাড়া রেখার বুক ও পেট বরাবর কাফ হরফের সুওবান আর ফি, নুন দিয়ে বন্ধন সৃষ্টি। নিচে হরফের কম্পোজিশন দিওয়ানী লিপির তলোয়ার কম্পোজিশন সদৃশ করা হয়েছে। এটা তুর্কি ধারার বাঙ্গালা সংস্করণ বলা যায়। এধরণের কাজ থেকে বেংগল তুগরার স্বকীয় ধারা বিকশিত হয়। সুলতান আহমদ শাহ(১৪৩২-১৪৪১ ইসায়ি) সময়ের শিলালিপি এটি।
গৌড়ের চান্দ দরওয়াজা শিলালিপিটি বারবাক শাহের(১৪৬৬-১৪৬৭ ইসায়ি) সময়ের। তুগরার অসাধারণ একটি নমুনা এটি। খাড়া আয়তন বিশিষ্ট দুই সারি ঘরগুলোতে চমৎকার তুগরা করা হয়েছে। চারপাশে বর্ডারে সুলুস লিপি এবং শামসি (সূর্য) সদৃশ ফুল দিয়ে অলঙ্করণ করা হয়েছে। এটি সমসাময়িক ক্যালিগ্রাফির একটি সেরা কাজ।
সুলতানী আমলের শেষদিকে মাহমুদ শাহের (১৫৩৪-১৫৩৫ ইসায়ি) সময়ের একটি অজ্ঞাতনামা শিলালিপির ছবিতে দেখা যায় সুলুস লিপিকে চমৎকার করে উৎকীর্ণ করা হয়েছে। এসময় পোড়া মাটির ফলকে সুলুস লিপির কিছু কাজ হয়েছে। সুলতানী আমলের ক্যালিগ্রাফি ছিল পরিপূর্ণ আরবি লিপি শৈলিতে প্রত্যাবর্তনের একটা প্রচেষ্টা। এসময়ে ভাষাগত বিষয়টি ফারসীর পাশাপাশি আরবির প্রতি বিশেষ টান পরিলক্ষিত হয়। সুলতানি আমলে প্রচুর মসজিদ ও মাদ্রাসা একসাথে গড়ে ওঠে এবং বিশুদ্ধ আরবি চর্চার দিকে মনোনিবেশ করতে দেখা যায়। সুলুস লিপি হচ্ছে আরবি লিপিশৈলির মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাবান এবং নান্দনিক শৈলি। বাঙ্গালার স্বাধীন সুলতানগণ যথার্থই ক্যালিগ্রাফির সৌন্দর্যবোধের সমঝদার ছিলেন এবং সেরা শৈলিটিরই প্রসার ও উন্নয়নে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন।
সুলুস শৈলির আধুনিক সংস্করণ মুহাক্কাক লিপি। এটি মূলত: "খত আল-মাসাহিফ" বা কুরআনের লিপি হিসেবে বহুল পরিচিত। কুরআন লিপিবদ্ধ করণে চামড়ার অধিক ব্যবহারের জন্য কুরআনকে মুসহাফও বলা হয়। ইসায়ি ৯ম শতকের প্রথমদিকে আব্বাসীয় খলিফা মামুনের সময়ে লিপিটির উন্নয়ন ও প্রসার হয়। এটি ক্যালিগ্রাফির জনক ইবনে মুকলার(মৃ. ৯৪০ ইসায়ি)হাতে পরিশীলিত এবং ইবনে বাওয়াব(মৃ. ১০২২ ইসায়ি) ও ইয়াকুত আল মুস্তাসিমীর(মৃ. ১২৯৮ ইসায়ি)হাতে শৈলিতে শীর্ষ মানে পৌছায়। বাঙ্গালায় সুলতানী আমলে উৎকীর্ণ লিপি হিসেবে মুহাক্কাক লিপির ব্যবহার ক্যালিগ্রাফির উৎকর্ষতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। বরেন্দ্র মিউজিয়ামে রক্ষিত(নং-৩২৪) ত্রিকোণাকার একটি কালো পাথরের ওপর উৎকীর্ণ এ লিপিটি মুহাক্কাক শৈলির একটি উৎকৃষ্ট নমুনা। গবেষক অধ্যাপক ইউসুফ সিদ্দিক একে সুলুস লিপি বলেছেন। সম্ভবত সাধারণ দৃষ্টিতে সুলুস এবং মুহাক্কাক একই রকম দৃশ্যমান হওয়ায় এ বিভ্রাট হয়েছে। সুলুস লিপিতে লফজে জালালাহ'র "হা" এবং মুহাক্কাক লিপিতে লফজে জালালাহ'র "হা" সাধারণত ভিন্ন হয়ে থাকে। মুহাক্কাক লিপি সুলুস লিপি থেকে অপেক্ষাকৃত সরল, স্পষ্ট এবং এতে তাজবিদ ও তাশকিল প্রয়োজন মাফিক প্রয়োগ করা হয়। সতর বা বেজ লাইনের নিচে হরফের অংশ প্রায় ২০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি কোণে ছয় নোকতার বেশী প্রলম্বিত হয়। অন্যদিকে সুলুস লিপিতে এটি ৪৫ ডিগ্রি কোণে ছয় নোকতা বরাবর হয়। ইয়া মাজহুল বা কাফ সুওবান সুলুস লিপি থেকে আলাদা। সতরের উপরে হরফের খাড়া দন্ড সুলুস লিপি থেকে একটু লম্বা এবং কিছুটা চিকন হয় এবং লম্ব দন্ডের নিচের অংশ বেশ খানিকটা চিকন হয় এবং মুরাক্কাব হলে নিচের অংশ প্রায় দুই নোকতা বরাবর চেরা হয়।। মুহাক্কাক এবং রায়হানী লিপি পার্থক্য করা আরো কঠিন। একই কলমে রায়হানী লিপি মুহাক্কাক থেকে সাইজে কিছুটা ছোট এবং আরো স্পষ্ট হয়। বিশেষ করে মুহাক্কাক লিপিতে বিসমিল্লাহর একটি বিখ্যাত ফর্ম আছে। প্রায় তিনশ বছর এলিপিটি কুরআনের লিপি হিসেবে ব্যবহারের সময় বিসমিল্লাহ'র এ ফর্মটির অধিক ব্যবহার দেখা যায়। বরেন্দ্র জাদুঘরে রক্ষিত শিলালিপিটির বিসমিল্লাহটি সেই ফর্মে উৎকীর্ণ করা হয়েছে।
গবেষক অধ্যাপক ইউসুফ সিদ্দিক রচিত "হিস্টোরিকাল এন্ড কালচারাল এস্পেক্ট অব দ্যা ইসলামিক ইনসক্রিপশনস অব বেঙ্গল: আ রিফ্লেক্টিভ স্টাডি অব সাম এপিগ্রাফিক ডিসকোভারিস" গ্রন্থের ২৪,২৯,৩১,৩৩ নং ইনসক্রিপশনকে সুলুস বলে তিনি উল্লেখ করলেও মূলত সেগুলো মুহাক্কাক লিপি।
ড. আবদুল করিম তার "করপাস অব দ্যা এরাবিক এন্ড পারসিয়ান ইনসক্রিপশনস অব বেঙ্গল" গ্রন্থে প্লেট-২৯-এ, ৩৬, ৪২-এ, ৪৩-এ'র লিপি নাশখ বলে উল্লেখ করেছেন। আসলে এগুলোও মুহাক্কাক লিপির উৎকৃষ্ট নিদর্শন।
মোগল শাসকরা (১৫৭৬-১৭৫৭ ইসায়ী) শিয়া প্রভাবিত ছিলেন। ফারসি ভাষার মত ফার্সি লিপি নাস্তালিক লিপির প্রতি তাদের আকর্ষণ ছিল প্রায় প্রশ্নাতীত। এজন্য সুলতানী আমলের ক্যালিগ্রাফার ও খোদাইকারদের একটি বৃহদাংশ বিপাকে পড়েন। এসময় বাঙ্গালার উৎকীর্ণ লিপিতে একটি জগাখিচুড়ি অবস্থা দেখা যায়। সামান্য সংখ্যক ব্যতিক্রম ছাড়া আরবি মিশ্রিত ফারসি শিলালিপিতে সৌন্দর্য বলতে তেমন কিছু ছিল না। তবে কিছুকালের মধ্যে ইরান থেকে লিপি শিল্পী ও খোদাইকারদের বাঙালায় আগমন ঘটে এবং নাস্তালিক লিপি দিয়ে চমৎকার সব নামফলক তৈরি হতে থাকে। নামফলকে কুরআন-হাদিসের বাণী বাদ দিয়ে ফার্সি কবিতার ছত্র জায়গা করে নেয়। মাজারগুলো পুজার আখড়ায় পরিণত হয়। নানা নামে-বেনামে অসংখ্য পীর-আওলিয়ার মাজারের উদ্ভব ও ইমামবাড়া প্রতিষ্ঠিত হয়। মোগলরা বাঙ্গালায় শাসন ক্ষমতা দখল করে ইসলামী আকিদা ও তমুদ্দুনের তরীটি ডুবিয়ে দেয়। আরবি ক্যালিগ্রাফির জৌলুস নিভিয়ে ফার্সি ক্যালিগ্রাফির নিশান উড়ায়।
ফার্সি ক্যালিগ্রাফারদের 'শিরিন দাস্ত' 'জরীন দাস্ত' উপাধী আর রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয়। এসময় গুলজারের মত কিছু ফার্সি লিপি বাঙ্গালায় ছড়িয়ে পড়ে। কুরআন লেখায়ও এর বেশ প্রভাব পড়ে। ইরানী নাশখ লিপিতে অনেক কুরআনের কপি করা হয়। মোগল আমলের নামকরা কিছু ক্যালিগ্রাফারের উল্লেখ ইতিহাসে পাওয়া গেলেও সুলতানী আমলের ক্যালিগ্রাফারদের প্রায় সবাই ইতিহাস থেকে নিচিহ্ন হয়ে গেছেন। অথচ একটু গভীর দৃষ্টিতে দেখলে ধারণা করা যায়, সুলতানী আমলের বাঙ্গালার আরবি ক্যালিগ্রাফি স্বকীয়তা, বিশুদ্ধতা ও শৈলির দিক দিয়ে বিশ্ব মানের ছিল। একই সময়ে(১২০০-১৬০০ ইসায়ি) তুরস্কের পাথরে উৎকীর্ণ সুলুস, নাশখ, মুহাক্কাক, রায়হানী লিপির হুবহু মিল বাঙ্গালার ক্যালিগ্রাফিতে বিদ্যমান। এমনকি বিরাম চিহ্ন, শামসী ও পৃথক বর্ডার লাইন দিয়ে খোপ খোপ করার পদ্ধতি ও খোদাই(জমিন খোদাই) নীতিমালা হুবহু তুরস্কের ক্যালিগ্রাফির অনুসরন করা হয়েছে। অপেক্ষাকৃত রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় খোদাই মান ও লিপির শৈল্পিক প্রয়োগ উৎকৃষ্ট ও নিখুত হয়েছে। অন্যদিকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের খোদাই কাজে সেই মান অনুপস্থিত। এছাড়া ধারণা করা যায়, এসব লিপির পাঠক ও শিল্পমান সমঝদার সেসময়ে কম ছিল না।
ক্যালিগ্রাফির আধ্যাত্মিক আবেদন এতটাই প্রবল হয়েছিল যে, মূর্তিখোদাই পাথরের উল্টা পাশ মসৃন করে তাতে ক্যালিগ্রাফি করা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে রক্ষিত ঢাকার মান্দ্রা(মান্ডা) মসজিদ (খোদাই কাল-১৪৩৩ ইসায়ি) উৎকীর্ণ লিপির ফলকের উল্টাপাশে বিষ্ণু বা তারা মূর্তি খোদাই করা আছে। এলিপিটিকে ড. আবদুল করিম প্রচলিত নাশখ উল্লেখ করেছেন, অথচ এটি বিহারী লিপির চমৎকার নিদর্শন। এ ফলকটির চার লাইন লেখার মধ্যে শেষ এক লাইন ও ৩য় লাইনের শেষের অংশ বিশেষ খোদাই সম্পন্ন হয়নি, তবে হরফের আউট লাইন খোদাই করা হয়েছে। এ শিলালিপি থেকে পাথর খোদাইয়ের পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা করা যায়। বর্তমানে পুরাণ ঢাকার শাখারী পট্টি ও বায়তুল মোকারম এলাকায় পাথর খোদাই এচিং পদ্ধতিতে রুপান্তর ঘটেছে। অথচ এক দশক আগেও হাতে পেনসিল ডিজাইন ও হাতুড়ি-ছেনি দিয়ে হাত খোদাই চালু ছিল। তবে মোঘল আমলের শেষ দিকে এসে রিভার্স বা জমিন খোদাই উঠে যায়, সেখানে হরফ খোদাই চালু হয় আর ইংরেজ শাসন আমলে ইংরেজি হরফ খোদাই তাদের ঐতিহ্য বিধায় গত এক দশক পর্যন্ত হাতে হরফ খোদাই চালু ছিল। বর্তমানে এচিং পদ্ধতিতেও হরফ খোদাই চালু আছে। তবে ইসলামী ঐতিহ্য হচ্ছে জমিন খোদাই করে হরফকে উচু করা। এটি যেমন কঠিন, তেমনি নান্দনিক ও দক্ষতার পরিচায়ক।
বাংলা ভূখন্ডে ক্যালিগ্রাফির পদযাত্রায় শিলালিপির ভূমিকা অপরিসীম। আমাদের শিকড় সন্ধানে এ বিষয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন এবং এতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার জোর দাবি জানাই।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
লেখক- এমফিল গবেষক, চারুকলা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
Comments
Post a Comment